Friday, October 21, 2011

এ পরবাসে রবে কে





[1]

সাধারনতঃ আমার বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়না। আসলে আমরা হাড়ে মজ্জায় উদ্বাস্তু।তাই কোনদিন পিছুটান লাগে না আমাদের, তাছাড়া আমি মীনলগ্নে জাত, সতত সঞ্চরনশীল, আমার তাই শ্যাওলা জমে না শরীরে।
কিন্তু আজ সন্ধ্যেবেলা আমি এক্কা দোক্কা খেলছিলাম বাড়িওয়ালার কাজের মেয়েটার সাথে। টপকে পার হচ্ছিলাম সরু বারান্দার কোণের ঘর, আর শাখানদী উপনদী ঠাসা লাল সিমেন্টের সিঁড়ি। এমন সময়ই ঘরে কেউ ধুনো দিল। সুগন্ধি অতর্কিত সন্ধ্যেয় আমার মনখারাপ শুরু হল- ঘন চটচটে। কেন? বাড়ির জন্যে?

[2]
আমার অন্য দুই রুমমেট এর সাথে একদিন মনখারাপের কম্পিটিশন করেছিলাম। আমার মন খারাপ কোমর না ছাড়ালেও, ওদের মনখারাপ একটা গোটা জ্যামিতিক সপ্তাহ নিম্নচাপের স্যাঁতস্যাতে বৃষ্টির মতো ঘিরে ছিল ওদের।

[3]
বাইরের চিলতে সরু বারান্দায় অদ্ভুত সিকোয়েন্স এ জামাকাপড় শুকোচ্ছে কোনোরকম জ্যামিতিক বোধ ছাড়াই-একটা সাদা রঙের সালোয়ার প্যান্ট,
নীল সবুজ কামিজ (ফুলছাপ, সম্ভবত বাড়িওয়ালির),
বিবির বাজার হাট থেকে কেনা আমার খয়েরী হলুদ গামছা,
রিমার পোল্‌কাডট লাল নাইটি,
আমার বাটিকের কালো স্কার্ট,
ডানদিকের পকেট ছেঁড়া একটা জিন্সের বারমুডা,
উলটো করে ক্লিপ লাগানো একটি শ্রীরাধা শয্যা ভবনের প্যাকেট।

[4]
দোতলা বারান্দাটার যে কোনটাতে আমরা বাসন মাজি, তার একপাশে একটা মস্ত বড় শ্যাওলা ধরা হলুদ রঙের চৌতলা বাড়ি। তার উপর থেকে উঁকি মারে একটুকরো আকাশ। কখোনো নীল-সাদা, কখনো ধোঁয়াটে বর্ষার, কখনো ছাদের আলগা পিলারের মাথায় ঝুলে থাকা বেওকুফ চাঁদ।

এইসব ছায়াচিত্র বেঁচে থাকার জন্যে খুব মেহেরবাঁ নয়। তাই আমরা কমলা রঙের বাটিতে ঠিক দশফোঁটা প্রিল নিয়ে( বাসন মাজার লেবু যুক্ত ডিটারজেন্ট) বাসন মাজতে বসি।

বাড়িটা কিন্তু জেন মঠের মতো চুপচাপ, নিস্পন্দ। দূরে একটা বাড়ির ওয়াটার ট্যাঙ্কের মাথায় কাকেদের জোরদার জনসভা। বারান্দার ঠিক নিচেকার অ্যাসবেস্‌টস এর ছাদে সাদা কালো রঙের পাজি বেড়ালটা লেজটাকে লাঠির মতো খাড়া করলো। ছায়াচিত্র চলতেই থাকে। বাড়িটার আলসেতে ছয়ইঞ্চি নয়নতারা গাছে গোলাপী রঙের ফুল আসে।

মাঝে মাঝে সন্ধ্যের দিকে আমি বারান্দায় দাঁড়াই। বাড়িটার ভিতর থেকে কোনো আলোর স্পন্দন আসে না। লাল-হলুদ-নীল কাঁচের খিলান ঘুমিয়ে থাকে সারাটা সন্ধ্যা, সারাটা রাত।তবু মাঝে মাঝে ফিস্‌ফিসে ফিন্‌ফিনে গলায় কে যেন গেয়ে ওঠে – ‘ মলিন হয়েছে ঘুমে চোখের কাজল/ এ নয় আঁখি জল’। আমার ভারি অবাক লাগে, শূন্য বাড়িও গান গাইতে পারে তাহলে??

গতকাল, মাত্র গতকাল আমি এই বাড়িটার প্রেমে পড়ি। কারণ আমি ওই সন্ধ্যেয় একটা সামান্য বাটি মাজতে গিয়েছিলাম। আকাশটা তখন টক্‌টকে লাল। দূরে বাদ্যি বাজছে ঢ্যাম কুড়াক্কুড়। আমায় চমকে দিয়ে আশ্চর্য্য দানাদার গলায় বাড়িটা গেয়ে উঠলো-

অরণ্যে আজ স্তব্ধ হাওয়া
আকাশ আজি শিশির ছাওয়া রে
আলোতে আজ স্মৃতির আভাস বৃষ্টির বিন্দুর
গানের পালা শেষ করে দে রে
যাবি অনেক দূর’’।

অনেক দূর।
[5]
দূরের কথায় মনটা ভারি খারাপ হয়ে যায়। আমার দিদির ছোট্ট মেয়ে জানলা দিয়ে বাইরে দেখে আর অবাক গলায় বলে – ‘দ্যাখ দ্যাখ কত্তো দূর’’।

এই দূরের জন্য আমি মাঝে মাঝে ভূতল পরিবহন নিগম এর লাল-সাদা বাস গুলোয় চড়ে বসি। পেরিয়ে যাই অসাধারন সব জনপদ আর আলোয় ভরা কাশ ফুলের মাঠ। একচালা বুকে দাঁড়িয়ে থাকে কৃষ্ণচূড়ার মোড়, আশ্চর্য্য নামের সব দেশপাট- দিক্‌নগর, রাধানগর, সন্ন্যাসী বাজার।

বিরহী নামের একটা নিস্তুব্ধ জায়গায় আমি বাস থেকে নেমে পড়ি। মস্তবড় পাকুড় গাছের গোড়ায় ঘুমটি ঘরে চিপস্‌ প্যাকেটের রঙের খেলা।

এপথ-সেপথ হয়ে আমি ঠিক পৌঁছে যাই বয়ফ্রেণ্ডের একটেরে ফ্ল্যাটটায়। খানিকক্ষন এতোল বেতোল এক্কা দোক্কা খেলার পর ছোঁয়াছুঁয়ির নেশায় মেতে উঠি। বন্ধ চোখে পার হয়ে যাই উত্তুঙ্গ পাহাড়চূড়া, গর্জে ওঠে সমুদ্র তরঙ্গ, ঘাসে ঢাকা সমতল, প্রভাময় সব বন উপবন। ঘরের কোনে জমা হতে থাকে পরিত্যক্ত পোশাক আশাক।

ফুলছাপ চাদরে অপনোদনের ক্লান্তি লেপ্‌টে দিয়ে আমি সন্ধ্যের বাসস্টপে ব্যাগহাতে আবার দাঁড়াই। আধো তন্দ্রায়, বমির উৎক্লেশ জাপটে ধরে আমার মাংস। ভেঙে যাওয়া আলো আধাঁরিতে আমি স্পষ্ট জানতে পারি তিনিই ঈশ্বর, যিনি প্রকৃত মেষপালক। তবুও আরো একটি ব্যর্থ বিষন্ন দিন কেটে যায়। আরো একদিন ঘরে ফেরা হয়না আমার।

[6]
ঈশ্বরের সাথে একটি ঘনিষ্ট এনকাউন্টার আমরা মাঝে মাঝেই আলোচনা করি। নানারকম বিভ্রান্তিতে জন্ম নিতে থাকে এক একটা গোটা সন্ধ্যা। সস্তা চায়ের সঙ্গে সিগারেটের ধূমায়িত সহ্মোহনও কিছুটা আচ্ছন্ন করে ফেলে আমাদের।

কেউ একটা আস্ত বই ই লিখে ফ্যালে ‘ভগবানের সঙ্গে তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট’। কারো পছন্দের বিষয় একটি দুটি হাসিন দোয়েল বা শ্যামা। কেউ চায় কয়েক কোটি রৌপ্যখন্ড। কেউ বা আগ্রহী হয়ে ওঠে সৃষ্টিকালীন ক্লান্তি ডিপ্রেশান ও পোড়া সিগারেটের সংখ্যায়।

ব্যতিক্রমী একজন শুধু আকাঙ্খা করেছিল দীর্ঘায়িত একটি এগারো মিনিট। যে সংঘাত শেষ হবে নিবিড় অন্ধকারে। জন্ম নেবে ঈশা মুশা বুদ্ধ বা চৈতন্য নয় জন্মাবেন ‘শয়তান’।

[7]
রিমার কাছে মাঝে মাঝেই চিঠি আসে। সবুজ কালিতে অদ্ভুত মোলায়েম আবদারে লেখা থাকে ‘ বৃষ্টি না নামলে আমি যাবো না’।
কাঠফাটা এই শহরের রোদে ভিজতে থাকা ফুটপাত, কুকুরছানা ছাতিম কদম সিদ্ধেশ্বরীতলা ফিস্‌ফিস করে ওঠে আবদারে আবদারে ‘বৃষ্টি না নামলে আমি যাবো না’।

এই না-যাওয়াগুলো অনুশীলন করতে আমি সন্ধ্যেগুলো বেছে নিই। জটবাঁধা ধোঁয়ার কুহক জমে ওঠে সংস্কৃত-সাহিত্য-পরিষদের পাঁচতলার বুকে। বিষন্ন চিলের দল ডানা মুড়ে নেমে আসে মেন হস্টেলের ছাদের বজ্র নিরোধক দন্ডে। বিহারী তেলে ভাজার দোকানে উদ্যোগ চলে পরের সকালের।

আমার কলম সন্ধ্যে থেকে সন্ধ্যেয় উপচে পড়ে। হস্‌পিটালের জানলা দিয়ে দেখতে পাই শহরের মাথায় মেঘের আবছা চাদর।

যদিও আমায় কেউ চিঠি লেখে না বহুকাল। বহুকাল আমি কোন দেশ ভ্রমনে যাই নি, তবুও অকেজো অভিমানে ফিস্‌ফিস করে বলি, ‘বৃষ্টি না নামলে আমি যাবো না’।

কি আশ্চর্য্য! কোথায় যাবো? যাওয়ার জায়গাটাই নেই যে।

[8]
যে ভাবে সব গল্পেরই শেষ হয়, একদিন বাসস্থানের এই উপাখ্যানেও ছেদ নামে। আর তিন জনে কোন এক কর্মহীন বিকেলে ছোটবেলার ভুলে যাওয়া খেলা খেলতে শুরু করি। পার্কের দিককার জানলাটা দিয়ে মাঝে মাঝে শব্দ-বর্ণ-গন্ধময় হাওয়া ভেসে আসে। বন্ধ চোখে হাত ধরাধরি করে বসে থাকি আমরা ।স্মৃতির মতন নেশা আর কিসে আছে! দশফুট বাই দশফুট ঘরটা হঠাৎ এক নৌকোর আদল পায়। আমরা পিছনে স্পষ্ট শুনতে পাই ঢেউ এর শব্দ, “এলাটিং বেলাটিং সই লো/ কিসের খবর আইলো/ রাজামশাই রাজামশাই একটি বালিকা চাইলো/’’।

অতএব আমাদের পরিক্রমণ এই বিশ্রি গলিটায় এসে থমকে পড়ে।

[9]
এ গলির এক মুড়োয় একটি জলের কল। ভাঙা চাতাল, সিমেন্টের আখাম্বা পিলারে কুঁদে তোলা সিংহের মুখ। সারাদিন নুব্জ্যদেহ বৃদ্ধের মত কলটি দাঁড়িয়ে থাকে। নিয়ন্ত্রণহীন জলে ভেসে যায় পথঘাট।
আরেক প্রান্তে এক ডাস্টবিন্‌। তাতে মরা বিড়ালের ছানা, কুচো চিংড়ির খোলা, পচা আনাজ, ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন এর সাথে এ পাড়ার বাসিন্দারা ফেলে আসেন বিগত যাপন। মুখার্জ্জী মাসিমার মাতাল ছেলের রাত করে বাড়ি ফেরা, গুহ বাড়ির ঘরপালানো উনিশ বছরের মেয়ে, পাল বাবুদের বিকৃতবুদ্ধি পুত্রসন্তান। গলির মোড়ে সবুজ পোশাকে সারা সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থাকা ‘ট্রান্সসেক্সুয়াল’ বিপন্নতা।

এই সবে চলকে পড়া হ্যালোজেন আলো নেশা জাগায় ভীষণ।আলোর কোণে কোণে শ্যামা পোকার মত জমে ওঠে কুয়াশা আর আকাঙ্খার ভীড়।আমাদের এইসব শহরযাপনে মেঘ-বৃষ্টি-কুয়াশা আসন পেতে বসে। আমাদের জানলার বাইরে জমে থাকে বছরকার ধুলো আর জোনাকিরা। আমাদের গাঢ় হয় ঘুম। ঘুমে হেঁটে যায় বালিকা বিদ্যালয়ের বন্ধুরা, মরে হেজে যাওয়া গান দিদিমনি।
আমাদের ঘুম স্বপ্ন পায়। আমাদের ঘুম কুয়াশা পায়।

[10]

“নদী যদি মদ হতো
মাতালে প্যাট ভরে খেত রে
আর চাখনা হতো বালি
কি করলি মা কালি?
বড় দাদা গো, বড় দিদি গো—
চামচিকা মাদলি বাজায়..................”

1 comment:


  1. Henderson Elizabeth
    Dr joy is a trust worthy spell caster and he will be of great help to you. I never believed in spell casting but After 4 years of marriage my husband left me because I lost my womb, and i was unable to give birth to children. I felt like my life has come to an end, and i almost committed suicide, i was emotionally down for a very long time, but thanks to this spell caster called Dr joy whom i met online after my friend Becky Ross told me how he also helped her to bring back her husband in less than 2 days. I believed her and decided to give Dr joy a try and i contacted him on his email joylovespell@gmail.com. and explained my problems to him. He laughed and told me that In less than 2 days, my Husband will come back to me again, and that he will restore my womb and i will give birth to children. At first i thought it was a joke but i took courage and believed as Dr joy has said and it did happen just as this Great spell caster said, My husband called me and was crying, begging for forgiveness. I forgive him and today i am so glad that all worries and problems has gone away, and we are even happier than before, another good news is that i am pregnant now, and very soon we will have our baby. Dr joy is really a gifted and a powerful spiritual man and i will not stop publishing him because he is a wonderful man. I advice you all If you have a problem and you are looking for a real and genuine spell caster to solve all your problems just Contact Dr joy on his email on joylovespell@gmail.com. because he will always help you to solve all problems. Once again thank you Dr joy. Thank you, thank you.
    you can also call him or add him on Whats-app: +2348100452479.

    ReplyDelete